যারা হাদীসের বাণীকে বিদ্রুপ করে তাদের পরিণতি ভয়াবহ ...

Google Ads

আল্লাহ বলেন,وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ، قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ- لاَ تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ، إِنْ نَعْفُ عَنْ طَآئِفَةٍ مِّنْكُمْ نُعَذِّبْ طَآئِفَةًم بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ- 'আর যদি তুমি তাদের জিজ্ঞেস কর, তাহ'লে তারা অবশ্যই বলবে, আমরা তো কেবল খোশ-গল্প ও খেল-তামাশা করছিলাম। বলে দাও, তবে কি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর আয়াত সমূহ এবং তাঁর রাসূলকে নিয়ে উপহাস করছিলে?'। 'তোমরা কোন ওযর পেশ করোনা। ঈমান আনার পরে তোমরা অবশ্যই কুফরী করেছ। অতএব যদি আমরা তোমাদের একটি দলকে ক্ষমা করি, তবে আরেকটি দলকে শাস্তি দেব। কেননা (উপহাস করার কারণে) তারা অপরাধী' (তওবা-মাদানী ৯/৬৫-৬৬)।

তাবেঈ বিদ্বান ক্বাতাদাহ (৬১-১১৮ হি.) বলেন, তাবূক যুদ্ধে একদল মুনাফেক নিজেরা বসে রাসূল (ছাঃ)-কে ইঙ্গিত করে বলাবলি করছিল, হায় হায়! এই ব্যক্তি রোমকদের প্রাসাদ ও দূর্গসমূহ জয় করবে'। অহি-র মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় নবীকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। তখন তিনি বললেন, ঐ লোকগুলিকে আমার কাছে নিয়ে এসো। অতঃপর তাদেরকে আনা হ'ল। কিন্তু তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলল যে, আমরা এসব কিছু বলিনি। কেবল হাসি-ঠাট্টা করেছিলাম' (ইবনু কাছীর)।

ইমাম কুরতুবী (৬১০-৬৭১ হি.) বলেন, এরা ছিল ৩ জন। তাদের মধ্যে ২ জন ঠাট্টা করেছিল এবং ১ জন হেসেছিল। যে হেসেছিল, সে তওবা করেছিল এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছিল। ইবনু হিশাম (মৃ. ২১৮ হি.) বলেন, ঐ ব্যক্তির নাম ছিল 'ইবনু মাখশী'। সকল ঐতিহাসিক বলেন, ঐ ব্যক্তি আবুবকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (১১-১৩ হি.) মুরতাদদের ও ভন্ডনবী মুসায়লামা কাযযাবের বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধে (১২ হি.) শহীদ হন (কুরতুবী)।

তাবেঈ বিদ্বান ইকরিমা (২৫-১০৫ হি.) বলেন, উক্ত বিষয়ে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার পর ঐ ব্যক্তি বলেছিল, 'হে আল্লাহ আমি এমন আয়াত শুনেছি, যার মর্ম আমি বুঝেছি। যাতে চর্ম শিহরিত হয় এবং অন্তর বিগলিত হয়। হে আল্লাহ তুমি আমাকে তোমার রাস্তায় এমনভাবে নিহত হওয়ার মৃত্যু দাও, যেন কেউ বলতে না পারে যে, আমি তাকে গোসল দিয়েছি, কাফন পরিয়েছি ও দাফন করেছি'। ইকরিমা বলেন, ঐ ব্যক্তি ইয়ামামার যুদ্ধে নিহত হয়, অথচ তার লাশ পাওয়া যায়নি (ইবনু কাছীর)। কুরতুবী বলেন সকল বিদ্বান একমত যে, পরে তিনি তওবা করেন ও আব্দুর রহমান নাম ধারণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হন। কিন্তু তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি (কুরতুবী)।

বিদ্বানগণ বলেন, অত্র আয়াতটি আল্লাহ, রাসূল, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে নিয়ে উপহাসকারী ব্যক্তি কাফের হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত অসংখ্য বরং অবিরত ধারায় বর্ণিত দলীল সমূহের অন্যতম। এটি ইসলাম বিনষ্টকারী বস্ত্ত। যারা কথায়, কলমে, আচরণে বা অঙ্গভঙ্গিতে ইসলামের কোন একটি বিষয় নিয়ে বিদ্রুপ করে, উম্মতের সর্বসম্মত ইজমা বা ঐক্যমতে তারা কাফের এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ।[1] ইবনুল 'আরাবী বলেন, ইচ্ছায় বা খেল-তামাশা বশে কেউ এরূপ করলে সে কাফের হয়ে যাবে, এ ব্যাপারে উম্মতের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। তার উপরে ইসলামী দন্ডবিধি জারী হবে'।[2] উক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা আব্দুর রহমান নাছের আস-সা'দী (১৩০৭-১৩৭৬ হি.) বলেন, আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের প্রতি বিদ্রুপকারী ব্যক্তি কাফের, যদি না সে তওবা করে' (ঐ, তাফসীর)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি হীনকর যেকোন কথা ও কাজ কুফরী, যদিও তার উদ্দেশ্য ভাল থাকে।

যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর মজলিসে এক বিতর্কে আবুবকর ও ওমরের কণ্ঠস্বর উঁচু হয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে আয়াত নাযিল হয়। যেখানে আল্লাহ বলেন,يَآأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَرْفَعُوآ أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلاَ تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لاَ تَشْعُرُونَ- إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ أُولَئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَى لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَّأَجْرٌ عَظِيمٌ- إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِنْ وَّرَآءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لاَ يَعْقِلُونَ- 'হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা পরস্পরে যেভাবে উঁচুস্বরে কথা বল, তার সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্মফল সমূহ বিনষ্ট হবে। অথচ তোমরা জানতে পারবে না'। 'যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট তাদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের হৃদয়কে তাক্বওয়ার জন্য পরিশুদ্ধ করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার'। 'নিশ্চয়ই যারা কক্ষসমূহের পিছন থেকে তোমাকে উচ্চস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশ নির্বোধ' (হুজুরাত-মাদানী ৪৯/২-৪)। আর আহলে সুন্নাতের ইজমা অনুযায়ী আমল বিনষ্ট হয়না কুফরী ব্যতীত (তওবা ৬৫-৬৬)। যেহেতু তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে বিদ্রুপ করেছে, সেহেতু তাদের কুফরীর জন্য এটুকুই যথেষ্ঠ (মাজমূ'উল ফাতাওয়া ৭/৪৯৪ পৃ.)।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, বিদ্রুপকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন ওযর হিসাবে গ্রহণ করেননি। তাই বিদ্রুপকারী ব্যক্তি দন্ড লাভের অধিকারী হবে (ই'লামুল মুওয়াকক্বেঈন ৩/৫৬)। শাফেঈ ও হাম্বলী মাযহাব মতে, উক্ত ব্যক্তি মুরতাদ ও ইসলাম থেকে খারিজ হবে। আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী বলেন, তওবা ৬৫ আয়াত দ্বারা কতগুলি বিধান সাব্যস্ত হয়। যেমন (১) বিদ্রুপ যেভাবেই করা হোক না কেন, সে কাফের। (২) 'হৃদয়ের কুফরীটাই হ'ল প্রকৃত কুফরী' এ দাবী অগ্রাহ্য। (৩) এটি প্রকৃত অর্থেই কুফরী। যদিও সে ইতিপূর্বে মুনাফিক ছিল। (৪) মুমিন হবার পরেও কোন ব্যক্তি থেকে কুফরী প্রকাশ পেতে পারে।[3] রাসূল (ছাঃ) বলেন,...وَإِنَّ الْعَبْدَ لِيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ لاَ يُلْقِي لَهَا بَالاً يَهْوِي بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ- 'আর বান্দা অবশ্যই এমন কথা বলে, যা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে যার গভীরতা পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের ন্যায়'।[4] একারণে খলীফা হারূণুর রশীদ (১৭০-১৯১ হি.) এক ব্যক্তিকে বলেন,إيَّاكَ وَالْقُرْآنَ وَالدِّيْنَ، وَلَكَ مَا شِئْتَ بَعْدَهُمَا- 'কুরআন ও দ্বীন থেকে সাবধান! এছাড়া অন্য যা খুশী বল'।[5] অতএব সর্বদা কুরআন ও দ্বীন বিষয়ে সকল প্রকার হীনকর কথা ও কর্ম থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

হাদীছ বিরোধীদের ভয়াবহ পরিণতি : আল্লাহ বলেন,لاَ تَجْعَلُوا دُعَآءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا،... فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ- 'তোমরা রাসূলের আহবানকে তোমাদের পরস্পরের প্রতি আহবানের ন্যায় গণ্য করো না।... অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে' (নূর-মাদানী ২৪/৬৩)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছকে যারা এড়িয়ে চলে, তাঁর আদেশকে যারা অন্যের আদেশের ন্যায় মনে করে অথবা হাদীছের বিরুদ্ধাচারণ করে বা অস্বীকার করে, অত্র আয়াতে তাদের ইহকালে কঠিন পরীক্ষা ও পরকালে মর্মান্তিক শাস্তির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। অতএব হাদীছ অস্বীকারকারী, বিদ'আতী, কথিত আহলে কুরআন ও সেক্যুলার লোকদের থেকে সাবধান!

বিদ্রুপকারীদের মিথ্যা শপথ : আল্লাহ বলেন,يَحْلِفُونَ بِاللهِ مَا قَالُوا وَلَقَدْ قَالُوا كَلِمَةَ الْكُفْرِ وَكَفَرُوا بَعْدَ إِسْلاَمِهِمْ وَهَمُّوا بِمَا لَمْ يَنَالُوا وَمَا نَقَمُوآ إِلَّآ أَنْ أَغْنَاهُمُ اللهُ وَرَسُولُهُ مِنْ فَضْلِهِ فَإِنْ يَّتُوبُوا يَكُ خَيْرًا لَّهُمْ وَإِنْ يَّتَوَلَّوْا يُعَذِّبْهُمُ اللهُ عَذَابًا أَلِيمًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُمْ فِي الْأَرْضِ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلاَ نَصِيرٍ- 'তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলে যে, তারা ঐ কথা বলেনি। অথচ তারা অবশ্যই কুফরী কথা বলেছে এবং ইসলাম কবুলের পর তারা কুফরী করেছে। তারা এমন বিষয়ের সংকল্প করেছিল, যা তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বস্ত্ততঃ তারা এই প্রতিশোধ নিচ্ছিল এই কারণে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে (গণীমত লাভের মাধ্যমে) অভাবমুক্ত করেছিলেন। এক্ষণে যদি তারা তওবা করে, তবে সেটি তাদের জন্য উত্তম হবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহ'লে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করবেন। আর ভূ-পৃষ্ঠে তাদের কোন বন্ধু বা সাহায্যকারী থাকবে না' (তওবা-মাদানী ৯/৭৪)।

উল্লেখ্য যে, তাবূক অভিযান থেকে মদীনায় ফেরার পথে এক সংকীর্ণ গিরিপথে ১২ জন মুখোশধারী মুনাফিক পিছন থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে হত্যার জন্য অতর্কিতে হামলা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তারা পালিয়ে যায়। সে বিষয়ের দিকে এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।[6]

বিদ্রুপকারীদের মন্দ ফল : আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ أَجْرَمُوا كَانُوا مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا يَضْحَكُونَ- وَإِذَا مَرُّوا بِهِمْ يَتَغَامَزُونَ- وَإِذَا انْقَلَبُوآ إِلَى أَهْلِهِمُ انْقَلَبُوا فَكِهِينَ- وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوآ إِنَّ هَؤُلَآءِ لَضَآلُّونَ- وَمَآ أُرْسِلُوا عَلَيْهِمْ حَافِظِينَ- فَالْيَوْمَ الَّذِينَ آمَنُوا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُونَ- عَلَى الْأَرَآئِكِ يَنْظُرُونَ- هَلْ ثُوِّبَ الْكُفَّارُ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ- 'নিশ্চয়ই যারা পাপী, তারা (দুনিয়ায়) বিশ্বাসীদের উপহাস করত'। 'যখন তারা তাদের অতিক্রম করত, তখন তাদের প্রতি চোখ টিপে হাসতো'। 'আর যখন তারা তাদের পরিবারের কাছে ফিরত, তখন উৎফুল্ল হয়ে ফিরত'। 'যখন তারা বিশ্বাসীদের দেখত, তখন বলত নিশ্চয়ই ওরা পথভ্রষ্ট'। 'অথচ তারা বিশ্বাসীদের উপর তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে প্রেরিত হয়নি'। 'পক্ষান্তরে আজকের দিনে বিশ্বাসীরা অবিশ্বাসীদের দেখে হাসবে'। 'উচ্চাসনে বসে তারা অবলোকন করবে'। 'অবিশ্বাসীরা যা করত, তার প্রতিফল তারা পেয়েছে তো?' (মুত্বাফফেফীন-মাক্কী ৮৩/২৯-৩৯)।

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন যে, আয়াতগুলি মক্কার মুশরিক নেতা অলীদ বিন মুগীরাহ, ওক্ববা বিন আবু মু'আইত্ব, 'আছ বিন ওয়ায়েল, আসওয়াদ বিন 'আব্দে ইয়াগূছ, 'আছ বিন হিশাম, আবু জাহ্ল ও নযর বিন হারেছ প্রমুখ নেতাদের সম্পর্কে নাযিল হয় (কুরতুবী)। দ্বীনের এইসব নিকৃষ্টতম শত্রুদের আচরণ রাসূল (ছাঃ) ও মুসলমানদের সাথে কেমন ছিল, তার বাস্তব বাণীচিত্র ফুটে উঠেছে সূরার শেষ দিকে বর্ণিত আয়াতগুলিতে। যুগে যুগে খালেছ ইসলামী নেতাদের সাথে মুশরিক নেতাদের আচরণ অনুরূপ হ'তে পারে, সেকথাই এখানে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাথে সাথে তাদেরকে জান্নাতের বিনিময়ে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়া হয়েছে।[7]

বিদ্রুপকারীরা মুনাফিক : আল্লাহ বলেন,وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ، إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِينَ وَالْكَافِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا- 'আর তিনি এই কিতাবে তোমাদের উপর এই আদেশ নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে যে, আল্লাহর আয়াত সমূহে অবিশ্বাস ও ব্যঙ্গ করা হচ্ছে, তখন তোমরা ওদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না ওরা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুনাফিক ও কাফেরদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন' (নিসা-মাদানী ৪/১৪০)। অতঃপর বলা হয়েছে,إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا- 'নিশ্চয়ই মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তুমি কখনোই তাদের কোন সাহায্যকারী পাবে না' (নিসা-মাদানী ৪/১৪৫)।

অত্র আয়াতে বলা হয়েছে যে, কাফের ও মুনাফিক উভয়ে জাহান্নামে একত্রিত হ'লেও মুনাফিক থাকবে কাফেরের এক দর্জা নীচে সর্বনিম্ন স্তরে। এর দ্বারা মুনাফিকদের কদর্য চিত্র অংকন করা হয়েছে। আর এটি কেবল পরকালে নয়, ইহকালেও তাদের অবস্থা অনুরূপ হবে।

আল্লাহ বলেন,وَإِذَا رَآكَ الَّذِينَ كَفَرُوآ إِنْ يَّتَّخِذُونَكَ إِلاَّ هُزُوًا، أَهَذَا الَّذِي يَذْكُرُ آلِهَتَكُمْ وَهُمْ بِذِكْرِ الرَّحْمَنِ هُمْ كَافِرُونَ- 'অবিশ্বাসীরা যখন তোমাকে দেখে, তখন তারা তোমাকে কেবল ঠাট্টার পাত্ররূপে গ্রহণ করে। আর বলে একি সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের উপাস্যদের সমালোচনা করে? অথচ তারাই 'রহমান'-এর উপদেশ (অর্থাৎ কুরআনকে) প্রত্যাখ্যান করে' (আম্বিয়া-মাক্কী ২১/৩৬)। বস্ত্ততঃ বোকারা জ্ঞানীদেরকে চিরকাল 'বোকা' বলেই ঠাট্টা করে থাকে।

আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَتَّخِذُوآ آيَاتِ اللهِ هُزُوًا، 'তোমরা আল্লাহর আয়াত সমূহকে তাচ্ছিল্যভরে গ্রহণ করো না' (বাক্বারাহ-মাদানী ২/২৩১)। তিনি আরও বলেন,وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّنْ قَبْلِكَ، فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُوا مِنْهُمْ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ- 'তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে বিদ্রুপ করা হয়েছে। ফল হয়েছিল এই যে, যা নিয়ে তারা বিদ্রুপ করত, তা তাদের উপরেই আপতিত হয়েছিল' (আম্বিয়া-মাক্কী ২১/৪১)। যেমন ইতিপূর্বে কওমে নূহ, হূদ, ছালেহ, কওমে লূত, শো'আয়েব ও কওমে মূসা ও ফেরাঊনের অবস্থা। যারা তাদের নবীদের তাচ্ছিল্য করার কারণে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে (দ্র. নবীদের কাহিনী-১ 'নূহ (আঃ)' অধ্যায়)।

বিদ্রুপ করা মূর্খদের কাজ : মূসা (আঃ)-এর কওম আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতে এটা করেছিল। যখন একজন খুনীকে চিহ্নিত করার জন্য আল্লাহ তাদেরকে একটা গাভী যবেহ করতে বলেন ও তার এক টুকরা গোশত নিহত ব্যক্তির দেহে মারতে বলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,فَقُلْنَا اضْرِبُوهُ بِبَعْضِهَا كَذَالِكَ يُحْيِ اللهُ الْمَوْتَى وَيُرِيكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ- 'অতঃপর আমরা বললাম, তোমরা (যবহকৃত) গাভীর দেহের একটি মাংসের টুকরা নিহত ব্যক্তির দেহে মারো। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন সমূহ প্রদর্শন করেন। যাতে তোমরা (আল্লাহর ক্ষমতা) হৃদয়ঙ্গম করতে পার' (বাক্বারাহ-মাদানী ২/৭৩)।

বস্ত্ততঃ ইহূদী আলেমদের ন্যায় মুসলমানদের বিদ'আতী আলেমরাও স্বল্প উপার্জনের জন্য তাদের বিদ'আতের পক্ষে কুরআন-হাদীছের অপব্যাখ্যা করে থাকেন। সেকারণ আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে সাবধান করে বলেন,فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً، فَوَيْلٌ لَّهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ- 'অতঃপর দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা নিজেদের হাতে কিতাব লেখে এবং বলে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ হ'তে অবতীর্ণ, যাতে বিনিময়ে তারা সামান্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। অতএব ধিক্ তাদের লেখার জন্য এবং ধিক্ তাদের উপার্জনের জন্য' (বাক্বারাহ-মাদানী ২/৭৯)।

খ্যাতনামা তাবেঈ মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (৩৩-১১০ হি.) বলেন,إِنَّ هَذَا الْعِلْمَ دِينٌ، فَانْظُرُوا عَمَّنْ تَأْخُذُونَ دِينَكُمْ- 'নিশ্চয়ই এই ইলম হ'ল দ্বীন। অতএব তোমরা দেখ কার কাছ থেকে তোমরা দ্বীন গ্রহণ করছ' (ছহীহ মুসলিম 'ভূমিকা' খন্ড ১৫ পৃ.)। অতএব শিরক ও বিদ'আতপন্থী আলেমদের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করা যাবেনা।

হাদীছের প্রতি বিদ্রুপকারীদের পরিণতি :

নিম্নে কয়েকটি ঘটনা বর্ণিত হ'ল।-

(১) মুছল্লীর মাথা গাধার মাথায় রূপান্তর :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَمَا يَخْشَى الَّذِي يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الْإِمَامِ أَنْ يُّحَوِّلَ اللهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حمَارٍ- 'যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তর করে দিবেন?'।[8]

কতিপয় মুহাদ্দিছ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, জনৈক ব্যক্তি হাদীছ শিক্ষার জন্য দামেশকের প্রসিদ্ধ এক আলেমের নিকট গেল। তিনি তাকে পর্দার আড়াল থেকে হাদীছ শোনালেন, যেন তার চেহারা না দেখা যায়। দীর্ঘ সময় তার সাহচর্যে থাকা এবং হাদীছের প্রতি তার গভীর আসক্তি দেখে উক্ত আলেম তার পর্দা উঠিয়ে দেন। তখন ঐ ব্যক্তি তার চেহারা দেখল গাধার ন্যায়। তখন তিনি তাকে বললেন,اِحْذَرْ يَا بُنَيَّ أَنْ تَسْبِقَ الإمَامَ، 'হে বৎস! ইমামের আগে যাওয়া থেকে সাবধান থেকো'। কেননা আমি এই হাদীছ শোনার পর এটাকে দূরবর্তী বিষয় বলে মনে করেছিলাম। ফলে আমি ইমামের আগে চলে যাই। যার কারণে আমার এই অবস্থা হয়েছে। যেমনটি তুমি দেখছ'।[9]

(২) বিদ'আতী আলেমের পরিণতি :

রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন,إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلاَ يَغْمِسْ يَدَهُ فِي الْإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ- 'যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে ওঠে, তখন সে যেন তার হাত (পানির) পাত্রে না ডুবায়- যে পর্যন্ত না তা তিনবার ধুয়ে নেয়। কেননা সে জানেনা তার হাত রাত্রে কোথায় ছিল'।[10]

বর্ণিত রয়েছে যে, জনৈক বিদ'আতী আলেম উক্ত হাদীছ শোনার পর বিদ্রুপ করে বলল, আমি কি জানিনা রাত্রিতে আমার হাত কোথায় থাকে? আমার হাত তো বিছানাতেই থাকে। সকালে উঠে সে দেখল যে, তার হাত কনুই পর্যন্ত তার মলদ্বারের মধ্যে ঢুকে আছে' (নববী, বুসতানুল 'আরেফীন ১/৫০ পৃ.)।

(৩) যমীনে আটকে যাওয়ার শাস্তি :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللهُ بِهِ طَرِيقًا مِّنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلَآئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِِّطَالِبِ الْعِلْمِ- 'যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তা দ্বারা তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথে পৌঁছে দেন এবং ফেরেশতাগণ সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন'।[11]

আল্লামা খতীব বাগদাদী (৩৯২-৪৬৩ হি.) বলেন, বছরার সেরা মুহাদ্দিছ আবু ইয়াহইয়া যাকারিয়া আস-সাজী (মৃ. ৩০৭ হি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা বছরার গলি পথে কয়েকজন হাদীছ বিশারদের সাথে সাক্ষাতের জন্য দ্রুতগতিতে হাঁটছিলাম। আর আমাদের সাথে একজন হাদীছকে বিদ্রুপকারী মু'তাযেলী ছিল। সে ঠাট্টা করে বলল, তোমরা সাবধানে পা ফেল, যেন ফেরেশতাদের ডানা না ভেঙ্গে যায়। আল্লাহর কসম! আমি আগামীকাল পেরেক লাগানো জুতা পরে ফেরেশতাদের ডানা ভেঙ্গে দিব। পরদিন সে সেভাবেই জুতা পরে চলল। এমতাবস্থায় দেখা গেল যে, সে যমীনে আটকে গেল এবং পূর্ণভাবে অবশ হওয়া পর্যন্ত সে সেখানেই পড়ে থাকল'।[12]

(৪) মিসওয়াক নিয়ে ঠাট্টার পরিণতি :

ইমাম নববী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, ৬৬৫ হিজরীতে দামেশকের বুছরায় জনৈক ব্যক্তি নেককার মুমিনদের বিষয়ে মন্দ ধারণা পোষণ করত। অথচ তার সন্তান তাদের বিষয়ে সুধারণা পোষণ করত। একদিন ঐ সন্তান হাতে মিসওয়াক সহ জনৈক বিদ্বানের কাছ থেকে ফিরে আসল। তখন তার পিতা তাকে ঠাট্টাচ্ছলে বলল, তোমার শায়েখ তোমাকে এই মিসওয়াক দিয়েছেন? বলেই সে তাকে তুচ্ছজ্ঞান করে তার পশ্চাদ্বার দিয়ে মিসওয়াকটি ঢুকিয়ে দিল। ফলে সে কিছু সময় অতিবাহিত করে মাছের আকৃতির বীভৎস একটি প্রাণী প্রসব করল। তারপর সে তাকে হত্যা করল। অতঃপর সে ঐভাবেই থেকে গেল বা দুই দিন পর্যন্ত।[13]

একই মর্মে ইবনু খাল্লেকান (৬০৮-৬৮১ হি.) বলেন, লোকটা খুবই অহংকারী এবং অজ্ঞ ছিল। সে মিসওয়াকের ফযীলত সম্পর্কে জানতে পেরে বলল, আল্লাহর কসম! আমি আমার গুহ্যদ্বারে মিসওয়াক করব। অতঃপর সে একটি মিসওয়াক নিয়ে তা করতে লাগল। ফলে সে ৯ মাস যাবৎ পেট ও গুহ্যদ্বারের প্রচন্ড যন্ত্রণায় ভুগতে থাকল। গর্ভবতীদের ন্যায় তার পেট বড় হয়ে গেল। অতঃপর সে ইঁদুরের শরীর ও মাছের মাথার ন্যায় বীভৎস এক জানোয়ার প্রসব করল। যার বড় বড় চারটি দাঁত ছিল এবং লেজ ছিল এক বিঘত লম্বা। তার ছিল চারটি আঙ্গুল ও খরগোশের ন্যায় একটি স্ফীত গুহ্যদ্বার। যখন সে এটি প্রসব করল, তখন তার কন্যা বিকটভাবে চিৎকার করল ও প্রাণীটির মাথা ফাটিয়ে দিল। এমতাবস্থায় লোকটি কয়েকদিন বেঁচে থাকল। অতঃপর মৃত্যুবরণ করল। সে বলত, এই জানোয়ারটি আমাকে হত্যা করেছে এবং আমার নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করেছে। অদ্ভূত এই প্রাণীটিকে শহরের লোকজন ও স্থানীয় খতীব দেখেছেন। আর এটি ছিল ৬৬৫ হিজরীর ঘটনা।[14]

(৫) সাপের দংশন ও মৃত্যু :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنِ اشْتَرَى شَاةً مُّصَرَّاةً فَهُوَ بِالْخِيَارِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ فَإِنْ رَدَّهَا رَدَّ مَعَهَا صَاعًا مِّنْ طَعَامٍ لاَ سَمْرَاءَ- 'যে ব্যক্তি ওলান বা পালান ফুলানো ছাগী ক্রয় করবে, তিন দিন পর্যন্ত তার জন্য অবকাশ থাকবে। যদি সে ছাগী ফেরত দেয়, তবে সে তার সঙ্গে এক ছা' খাদ্যবস্ত্ত দিবে। তবে সে উত্তম গম দিতে বাধ্য নয়'।[15]

ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) শায়েখ ইউসুফ হামাদানী থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা বাগদাদের জামে মসজিদে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় খোরাসানী জনৈক অনারব ব্যক্তি এসে আমাদেরকে কৃত্রিমভাবে ওলান ফুলানো ছাগী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। আমরা তাকে এর উত্তর দিলাম এবং আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীছটি দলীল হিসাবে উদ্ধৃত করলাম। তখন সে আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে কটাক্ষ করল। ফলে বাড়ীর ছাদ থেকে একটি সাপ পড়ল এবং বৈঠকে প্রবেশ করল। অতঃপর অনারব ব্যক্তিটিকে দংশন করল এবং সাথে সাথে সে মারা গেল'।[16]

(৬) পুড়ে ভষ্ম হওয়ার শাস্তি :

আল্লাহ বলেন,وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَّلَعِبًا، ذَالِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَعْقِلُونَ- 'আর যখন তোমরা ছালাতের জন্য (আযানের মাধ্যমে) আহবান করো, তখন তারা একে উপহাস ও খেলাচ্ছলে গ্রহণ করে। কারণ ওরা একেবারেই নির্বোধ সম্প্রদায়' (মায়েদাহ-মাদানী ৫/৫৮)।

সুদ্দী (মৃ. ১২৭ হি.) বলেন, মদীনায় 'আসবাত্ব' নামে একজন খৃষ্টান ছিল। সে যখন মুওয়ায্যিনের আযানেأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ- 'আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল' শুনত তখন বলত, এই মিথ্যাবাদী জ্বলে-পুড়ে ধ্বংস হৌক! ফলে একদিন বাড়ীর গৃহপরিচারিকা তার ও তার পরিবারের ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। সেখান থেকে আগুনের একটা স্ফুলিঙ্গ পড়ল। অতঃপর সে সপরিবারে পুড়ে ভষ্ম হয়ে ধ্বংস হয়ে গেল।[17]

(৭) কবর থেকে লাশ নিক্ষেপের শাস্তি :

হযরত আনাস (রাঃ) হ'তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক খৃৃষ্টান ব্যক্তি মুসলিম হয়ে সূরা বাক্বারাহ ও সূরা আলে ইমরান শিখল। সে রাসূল (ছাঃ)-এর 'কাতেবে অহি' বা অহি লেখক ছিল। অতঃপর সে পুনরায় খৃষ্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ-কে যা লিখে দিতাম, তার বাইরে সে কিছুই জানে না (নাঊযুবিল্লাহ)। অতঃপর আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেন। লোকেরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল যে, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। এটা দেখে খৃষ্টানরা বলতে লাগল যে, এটা মুহাম্মাদ ও তার লোকদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের সাথী তাদের থেকে বেরিয়ে এসেছে, সেহেতু তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। ফলে তারা আগের চাইতে গভীরভাবে কবর খনন করল এবং পুনরায় তাকে দাফন করল। কিন্তু তার পরদিন সকালে দেখা গেল যে, কবরের মাটি তাকে পুনরায় বাইরে নিক্ষেপ করেছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মাদ ও তার লোকদের কাজ। অতঃপর তারা আরও গভীরভাবে কবর খনন করে পুনরায় লাশটি দাফন করল। পরদিন সকালে দেখা গেল যে, কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারা বুঝতে পারল যে, এটা কোন মানুষের কাজ নয়। তাই তারা লাশটি ফেলে রাখল'।[18]

কুরআনের আয়াত সমূহকে 'স্যাটানিক ভার্সেস' বা 'শয়তানের বাণী' বইয়ের লেখক ভারতের মুম্বাইয়ের কুখ্যাত সালমান রুশদী এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের নাস্তিক ব্লগারদের ও সাম্প্রতিক সময়ে হাদীছ নিয়ে বিদ্রুপকারী কতিপয় আলেমের লজ্জাকর পরিণতি এ বিষয়ে স্মরণযোগ্য।

হাদীছের প্রতি বিদ্রুপকারীদের আল্লাহ হেদায়াত দান করুন এবং আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ বুঝার ও তা মানার তাওফীক দান করুন- আমীন!

[1]. নজদের একদল বিদ্বান, আদ-দুরারুস সানিইয়াহ ফিল আজভিবাতিন নাজদিইয়াহ ১/২৬৪ পৃ.।

[2]. ইবনুল 'আরাবী (৪৬৮-৫৪৩ হি.), আহকামুল কুরআন ২/৫৪৩ পৃ.।

[3]. তাফসীর রাযী, তওবা ৬৫ ও ৬৬ আয়াতের ব্যাখ্যা।

[4]. বুখারী হা/৬৪৭৭; মুসলিম হা/২৯৮৮; মিশকাত হা/৪৮১৩ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[5]. ত্বাবারী (২২৪-৩১০ হি.), তারীখ ৮/৩৪৯; ইবনুল ইমাদ (১০৩২-১০৮৯ হি.), শাযারাতুয যাহাব ২/৪৩৩।

[6]. কুরতুবী; ইবনু কাছীর; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৬০৩ পৃ.।

[7]. দ্র. তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা সূরা মুত্বাফফেফীন ২৯ আয়াতের ব্যাখ্যা।

[8]. বুখারী হা/৬৯১; মুসলিম হা/৪২৭; মিশকাত হা/১১৪১ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[9]. মিরক্বাত শরহ মিশকাত হা/১১৪১-এর ব্যাখ্যা; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী হা/৫৮২-এর ব্যাখ্যা।

[10]. বুখারী হা/১৬২; মুসলিম হা/২৭৮; মিশকাত হা/৩৯১ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[11]. আবুদাঊদ হা/৩৬৪১; ইবনু মাজাহ হা/২২৩; মিশকাত হা/২১২ রাবী কাছীর বিন ক্বায়েস আবুর্দ্দা (রাঃ) হ'তে।

[12]. খতীব বাগদাদী, আর-রিহলাতু ফী ত্বালাবিল ইলম ১/৮৫; বুসতানুল 'আরেফীন ১/৫০; মানাবী, ফায়যুল ক্বাদীর হা/২১২৩-এর আলোচনা, ২/৩৯২; তুহফাতুল আহওয়াযী হা/২৬৮২-এর ব্যাখ্যা; মিরক্বাত হা/২১২-এর ব্যাখ্যা।

[13]. মানাবী মিসরী (৯৫২-১০৩১ হি.), ফায়যুল ক্বাদীর ১/২৭৮।

[14]. ইবনুল ইমাদ (১০৩২-১০৮৯ হি.), শাযারাতুয যাহাব ৭/৫৫১; ইবনু কাছীর (৭০১-৭৭৪ হি.), আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৩/২৪৯।

[15]. মুসলিম হা/১৫২৪; মিশকাত হা/২৮৪৭ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।

[16]. ইবনু তায়ামিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হি.), মাজমূ'উল ফাতাওয়া ৪/৫৩৯।

[17]. তাফসীর ইবনু কাছীর; ত্বাবারী; মায়েদাহ ৫৮ আয়াতের ব্যাখ্যা।

[18]. বুখারী হা/৩৬১৭; দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ 'পরিশিষ্ট-১' অধ্যায় 'অন্যান্য বিষয়ে লেখকগণ' অনুচ্ছেদ ৮২২ পৃ.।

Google Ads

Google Ads

Google Ads

Google Ads

Newer Posts Newer Posts Older Posts Older Posts

Related Posts

Google Ads

Comments

Post a Comment
Loading comments...